১৯২১ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে কবি নজরুল রচনা করেছিলেন তার অমর সৃষ্টি ‘বিদ্রোহী’। সেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষপূর্তি, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে একটি বিশেষ ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাস।
এই উপলক্ষে সিউলস্থ ভারতীয় দূতাবাস, ইন্ডিয়ান আর্ট মিউজিয়াম, ট্যাগর সোসাইটি অফ কোরিয়া, বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অফ কোরিয়া এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে শনিবার অনলাইনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানটির পরিবেশনা করা হয় দূতাবাসের ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/BangladeshEmbassySeoul) থেকে।
দুই পর্বের এই সাংস্কৃতিক পরিবেশনাটির প্রথম পর্বে বরেণ্য এই দুই কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের সঞ্চালনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত ভারতের মান্যবর রাষ্ট্রদূত শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন এবং ইন্ডিয়ান আর্ট মিউজিয়ামের পরিচালক পদ্মশ্রী ড. কিম ইয়াং-শিক শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান করেন।
পরবর্তীতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী ‘বিদ্রোহী’ কবিতার পটভূমি সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব কোরিয়ার শিল্পীরা তাদের অনবদ্য নৃত্যের মাধ্যমে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি উপস্থাপন করেন। সেইসঙ্গে, ট্যাগর সোসাইটি অব কোরিয়ার সদস্যগণ গীতাঞ্জলী হতে কোরিয়ান ভাষায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কবিগুরু ও কাজী নজরুল ইসলামের ষড়ঋতু ভিত্তিক সঙ্গীত, কবিতা, নৃত্য ও যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
সঞ্চালনাকালে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে এবং তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কবিগুরু ও কাজী নজরুল ইসলামের অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন। এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপাল দুই দেশের অভিন্ন সম্পদ-যা বন্ধুপ্রতীম এই দুই দেশকে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।
তিনি আরো বলেন, কোরিয়ার জনগণের নিকট কবিগুরু সুপরিচিত হলেও কাজী নজরুল ইসলাম ততটা পরিচিত নয় বিধায় দূতাবাসের এই সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল কবিগুরুর পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলামকে কোরিয়ার জনগণের নিকট পরিচিত করে তুলবার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত ভারতের মান্যবর রাষ্ট্রদূত শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন তার বক্তব্যে বলেন, যে গত কয়েক বছর ধরে সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভারতীয় দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন করছে। তিনি আরো বলেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনার পাশপাশি দুই দেশের সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন রচনা করেছেন। কবিগুরুর আদর্শ ও চিন্তাধারা বর্তমান প্রেক্ষাপটেও প্রাসঙ্গিক যা ভবিষ্যতেও পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে তিনি বলেন, নজরুলের সাহিত্যকর্ম সুবিধাবঞ্চিত ও নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়, বিপ্লব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সাম্য ও স্বাধীনতার বার্তা বহন করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নজরুলের আদর্শ ও সাহিত্যকর্মের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন। ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পুরষ্কারে ভূষিত ইন্ডিয়ান আর্ট মিউজিয়ামের পরিচালক পদ্মশ্রী ড. কিম ইয়াং-শিক তার বক্তব্যে বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র ও নজরুলের অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করেন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী ‘বিদ্রোহী’ রচনার পটভূমি এবং তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন যে এই কবিতা প্রকাশের পরপরই নজরুলের খ্যাতি বাঙ্গালী সমাজে ছড়িয়ে পরে যা তখনকার তরুণ সমাজের মধ্যে আবেগ, অনুপ্রেরণা ও উন্মাদনার সঞ্চার করে এবং সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনা ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করে তোলে। তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী’ এমন একটি কবিতা যার তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা অপরিসীম ও অম্লান।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বটি বাংলার ছয়টি ঋতুকে কেন্দ্র করে রচিত কবিগুরু ও কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গীত এবং কবিতার উপর ভিত্তি করে নৃত্য, সঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, ট্যাগর সোসাইটি অফ কোরিয়া, বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব কোরিয়া এবং প্রবাসী বাংলাদেশিগণ এ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী এবং ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে কোরিয়ার জনগণ কবিগুরুর পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম এবং তার সাংস্কৃতিক অবদান সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
Array